ইলম কাকে বলে, ইলমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ইলমের গুরুত্ব |
ইলমের সংজ্ঞা: ইলমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ইলমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, ওলামায়ে কেরামের পরিভাষায় শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
العلم بالكسر وسكون اللام: في عرف العلماء
يطلق على معان منها، الإدراك مطلقا
ইলম
শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। এগুলোর একটি অর্থ হচ্ছে অনুধাবন ও উপলব্ধি করা।
দার্শনিকগণ এই অর্থের প্রবক্তা।
কেউ কেউ বলেন,
কেউ কেউ বলেন,
ومنها التصديق مطلقا، يقينياكان أو غيره
والعلم بمعنى اليقين في اللغة
‘ইলমের
অর্থ সত্যায়ন করা। চাই তা ইয়াকিনী হোক বা অন্য কিছু। আর অভিধান অনুযায়ী ইলম অর্থ
ইয়াকিন বা বিশ্বাস।’
এর এক অর্থ হচ্ছে التعقل বা আকলের সাহায্যে অনুধাবন করা। আর এই অর্থের ভিত্তিতেই ইলম শব্দটি কল্পনা, ধারণা
এর এক অর্থ হচ্ছে التعقل বা আকলের সাহায্যে অনুধাবন করা। আর এই অর্থের ভিত্তিতেই ইলম শব্দটি কল্পনা, ধারণা
ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইলমের আরেকটি অর্থ
হচ্ছে:
إدراك المسائل عن دليل
তথা
দলিলের ভিত্তিতে মাসআলা আয়ত্ব করা।
বস্তুত: ইলম হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সিফাত বা অনন্য গুণাবলিসমূহের একটি, যা ইলমের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।
ইলমের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্বসূরীগণ এর অন্তর্নিহিত একটি সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন। যেই সংজ্ঞায় ইলমের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং প্রকৃত ইলমের আলামত ফুটে ওঠে। যেমন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
ليس العلم بكثرة الرواية، إنما العلم خشية الله
বস্তুত: ইলম হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সিফাত বা অনন্য গুণাবলিসমূহের একটি, যা ইলমের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।
ইলমের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্বসূরীগণ এর অন্তর্নিহিত একটি সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন। যেই সংজ্ঞায় ইলমের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং প্রকৃত ইলমের আলামত ফুটে ওঠে। যেমন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
ليس العلم بكثرة الرواية، إنما العلم خشية الله
‘বেশি
বর্ণনা করা ও অধিক পরিমাণ আক্ষরিক জ্ঞান হাসিল করার নাম ইলম নয়, বরং
ইলম হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ভয়ের নাম।’
ইমাম মালেক (রহ.) বলতেন,
الحكمة والعمل نور يهدي به الله من يشاء وليس بكثرة المسائل ، ولكن عليه علامة ظاهرة وهو التجافي عن دار الغرور والإنابة إلي دار الخلود
‘
ইমাম মালেক (রহ.) বলতেন,
الحكمة والعمل نور يهدي به الله من يشاء وليس بكثرة المسائل ، ولكن عليه علامة ظاهرة وهو التجافي عن دار الغرور والإنابة إلي دار الخلود
‘
হেকমত
ও আমল হচ্ছে একটি নূর। যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে পথ
দেখান। আর বেশি বেশি মাসআলা জানার নাম ইলম নয়। এর একটি আলামত আছে। তা হচ্ছে, ইলমের
বদৌলতে প্রতারণার এই জগত থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং চিরস্থায়ী জগতের দিকে ধাবিত
হওয়া।’
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলতেন,
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলতেন,
وما العلم إلا العمل به والعمل به ترك
العاجل للآجل
‘
‘
ইলম
হচ্ছে আমলের নাম। আর আমল হলো স্থায়ী জগতের স্বার্থে ক্ষণস্থায়ী জগত পরিহার করা।’
أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسوله
মুমিন হতে হলে ইলম জরুরী
অনেকের ধারণা, ইলমের বিষয়টি কেবল ফযীলতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ ইলম হাসিল করা ভালো এবং সওয়াবের কাজ আর না করা দোষণীয় নয় তবে ছাওয়াব ও ফযীলত থেকে বঞ্চিত হওয়ার নামান্তর মাত্র। কিন্তু বিষয়টি কি আদৌ এমন? ফযীলতের মধ্যেই কি ইলম সীমাবদ্ধ? মোটেই তা নয়। বরং একজন মানুষের প্রকৃত মুমিন হওয়া নির্ভর করে ইলম হাসিলের ওপর। কারণ কোনো ব্যক্তি ইলম হাসিল করা ছাড়া প্রকৃতি মুমিনই হতে পারে না। কেননা মুমিন হওয়া নির্ভর করে দুটি বস্তুর ওপর। এক. সে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না। দুই. শরীয়ত নির্দেশিতপন্থা ছাড়া ইবাদত করবে না। আরএ দুটিই হচ্ছে তাওহীদের মর্মবাণী। যথা:أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسوله
‘আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও
রাসূল।’
সুতরাং তাওহীদের মর্মবাণীর মধ্যে ইলম অপরিহার্যভাবে জড়িত ও পরিব্যপ্ত। অতএব বোঝা গেল, ইলম ছাড়া তাওহীদের মর্মবাণী যথার্থভাবে উপলব্ধি হয়নি। একারণেই ইমাম বুখারী (রহ.) সহীহ বুখারীতে ইলমকে আমলের আগে প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন এবং একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন নিম্নোক্ত শিরোনামে-
بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ االْقَوْلِ
وَالْعَمَلِ لِقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ)
‘এ
অধ্যায় কথা ও কাজের আগে ইলম- এ বিষয়ে। যেমন আল্লাহও বলেছেন, ‘তোমরা
জানো যে আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই’।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করার তাদেরকে বিভিন্ন রকমের নেয়ামত দান করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর করুণা ও দান এত বিস্তৃত ও সীমাহীন যে, কারো পক্ষে সে সব নেয়ামতের হিসাব করা সম্ভব নয়। কিন্তু কোনো কোনো নেয়ামত এত মূল্যবান যে, যা হাজার নেয়ামতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাও ওই সব নেয়ামতের কথা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অমূল্য নেয়ামতরাজির অন্যতম হচ্ছে ইলম।
ইলম শুধু মহা নেয়ামতই নয়; বরং বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার প্রথম উপহার, যা তিনি বান্দা তথা মানুষ সৃষ্টি করার পর তাকে দান করেছিলেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করার আগে ফেরেশতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা নেতিবাচক পরামর্শ দেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এর জবাবে বলেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٞ فِي
ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةٗۖ قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيهَا مَن يُفۡسِدُ فِيهَا وَيَسۡفِكُ
ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّيٓ
أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٠ ﴾ [البقرة: ٣٠]
﴿ وَعَلَّمَ ءَادَمَ ٱلۡأَسۡمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ فَقَالَ أَنۢبُِٔونِي بِأَسۡمَآءِ هَٰٓؤُلَآءِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣١ ﴾ [البقرة: ٣١]
‘
﴿ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ﴾ [الرحمن: ٣، ٤]
﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [المجادلة: ١١]
﴿ وَلَقَدۡ جِئۡنَٰهُم بِكِتَٰبٖ فَصَّلۡنَٰهُ عَلَىٰ عِلۡمٍ هُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٥٢ ﴾ [الاعراف: ٥٢]
‘আর আমি তো তাদের নিকট এমন কিতাব নিয়ে এসেছি, যা আমি জেনেশুনে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তা হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ এমন জাতির জন্য, যারা ঈমান রাখে।’ {সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ৫২}
আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির মুহাম্মাদ আমিন শানকিতী (রহ.) বলেন,
ولا شك أن هذا القرآن العظيم هو النور الذي أنزله الله إلى أرضه ليستضاء به فيعلم في ضوئه الحق من الباطل والحسن من القبيح والنافع من الضار والرشد من الغي
‘হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ {সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ২৬}
আমাদের এই মহান ধর্মে ইলমকে অনেক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ইলমের ধারক-বাহকরা নবী-রাসূলদের উত্তরাধিকারী। আর আবেদ ও আলেমের মর্যাদার ফারাক আসমান ও যমীনের মতো। কায়স ইবন কাছীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمَ رَجُلٌ مِنَ الْمَدِينَةِ عَلَى أَبِي الدَّرْدَاءِ ، وَهُوَ بِدِمَشْقَ فَقَالَ : مَا أَقْدَمَكَ يَا أَخِي ؟ فَقَالَ : حَدِيثٌ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَدِّثُهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَمَا جِئْتَ لِحَاجَةٍ ؟ قَالَ : لاَ ، قَالَ : أَمَا قَدِمْتَ لِتِجَارَةٍ ؟ قَالَ : لاَ ، قَالَ : مَا جِئْتُ إِلاَّ فِي طَلَبِ هَذَا الحَدِيثِ ؟ قَالَ : فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَبْتَغِي فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الجَنَّةِ ، وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضَاءً لِطَالِبِ العِلْمِ ، وَإِنَّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الحِيتَانُ فِي الْمَاءِ ، وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ ، كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ ، إِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ ، إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا العِلْمَ ، فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.
সুতরাং তাওহীদের মর্মবাণীর মধ্যে ইলম অপরিহার্যভাবে জড়িত ও পরিব্যপ্ত। অতএব বোঝা গেল, ইলম ছাড়া তাওহীদের মর্মবাণী যথার্থভাবে উপলব্ধি হয়নি। একারণেই ইমাম বুখারী (রহ.) সহীহ বুখারীতে ইলমকে আমলের আগে প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন এবং একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন নিম্নোক্ত শিরোনামে-
بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ االْقَوْلِ
وَالْعَمَلِ لِقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ)
‘
‘এ
অধ্যায় কথা ও কাজের আগে ইলম- এ বিষয়ে। যেমন আল্লাহও বলেছেন, ‘তোমরা
জানো যে আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই’।ইলম: বান্দার প্রতি আল্লাহর প্রথম উপহার
[আবূ দাঊদ : ৩৩৬] |
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করার তাদেরকে বিভিন্ন রকমের নেয়ামত দান করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর করুণা ও দান এত বিস্তৃত ও সীমাহীন যে, কারো পক্ষে সে সব নেয়ামতের হিসাব করা সম্ভব নয়। কিন্তু কোনো কোনো নেয়ামত এত মূল্যবান যে, যা হাজার নেয়ামতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাও ওই সব নেয়ামতের কথা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অমূল্য নেয়ামতরাজির অন্যতম হচ্ছে ইলম।
ইলম শুধু মহা নেয়ামতই নয়; বরং বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার প্রথম উপহার, যা তিনি বান্দা তথা মানুষ সৃষ্টি করার পর তাকে দান করেছিলেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করার আগে ফেরেশতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা নেতিবাচক পরামর্শ দেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এর জবাবে বলেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٞ فِي
ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةٗۖ قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيهَا مَن يُفۡسِدُ فِيهَا وَيَسۡفِكُ
ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّيٓ
أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٠ ﴾ [البقرة: ٣٠]
‘আর
স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয়
আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি
কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং
রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার
পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জানি যা
তোমরা জান না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩০}
এরপর তিনি আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন। তাকে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম ইলম শিক্ষা দেন এবং ইলমকেই ফেরেশতাদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে সাব্যস্ত করেন। যেমন পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন,
এরপর তিনি আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন। তাকে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম ইলম শিক্ষা দেন এবং ইলমকেই ফেরেশতাদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে সাব্যস্ত করেন। যেমন পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَعَلَّمَ ءَادَمَ ٱلۡأَسۡمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ فَقَالَ أَنۢبُِٔونِي بِأَسۡمَآءِ هَٰٓؤُلَآءِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣١ ﴾ [البقرة: ٣١]
‘
আর
তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন।
অতপর বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি
তোমরা সত্যবাদী হও।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩১}
মোটকথা, আল্লাহ
তখন মানুষ সৃষ্টিতে দ্বিমতকারী ফেরেশতাদের সামনে কিছু বিষয় পেশ করেন যার জবাব দিতে
তারা ব্যর্থ হন এবং তখন আদম (আ.)-কে সেগুলোর জবাব দিতে বলেন। যেসব বিষয়ে ফেরেশতারা
নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করেন সেগুলো আদম (আ.) প্রকাশ করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
আল্লাহ তা‘আলা এভাবে ফেরেশতাদের সামনে ইলমের মাহাত্ম্য প্রকাশ করেন
এবং ইলম গ্রহণকারী মানুষকে তাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সুতরাং বুঝা গেল, নিষ্পাপ
ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো ইলম- আল্লাহ তা‘আলা
যা মানুষকে প্রথম উপহার হিসেবে দান করেছেন।
ইলম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে শুধু উপহারই নয়; বরং অসামান্য অনুগ্রহও বটে। তিনি কুরআনের বহু স্থানে বান্দার প্রতি তাঁর বিশেষ বিশেষ দান-অনুগ্রহের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। আর যে দান ও অনুগ্রহ সবিশেষ মূল্যবান সেটি হচ্ছে ইলম। ইরশাদ হয়েছে-
ইলম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে শুধু উপহারই নয়; বরং অসামান্য অনুগ্রহও বটে। তিনি কুরআনের বহু স্থানে বান্দার প্রতি তাঁর বিশেষ বিশেষ দান-অনুগ্রহের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। আর যে দান ও অনুগ্রহ সবিশেষ মূল্যবান সেটি হচ্ছে ইলম। ইরশাদ হয়েছে-
﴿ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ﴾ [الرحمن: ٣، ٤]
‘মানুষ
সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।’ {সূরা
আর-রহমান, আয়াত: ৩-৪}
ইলম
ও আলেমের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর বাণী
সাধারণ মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা বহু গুণ বেশি: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
সাধারণ মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা বহু গুণ বেশি: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [المجادلة: ١١]
‘তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায়
সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।’ {সূরা
আল-মুজাদালা, আয়াত: ১১}
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, ‘সাধারণ মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা সাতশত গুণ বেশি। এবং প্রতিটি মর্যাদার মধ্যে দূরত্ব পাঁচশত বছরের সমান।’
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, ‘সাধারণ মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা সাতশত গুণ বেশি। এবং প্রতিটি মর্যাদার মধ্যে দূরত্ব পাঁচশত বছরের সমান।’
কুরআনের
ইলম আলোকবিচ্ছরণকারী নূর
﴿ وَلَقَدۡ جِئۡنَٰهُم بِكِتَٰبٖ فَصَّلۡنَٰهُ عَلَىٰ عِلۡمٍ هُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٥٢ ﴾ [الاعراف: ٥٢]
‘আর আমি তো তাদের নিকট এমন কিতাব নিয়ে এসেছি, যা আমি জেনেশুনে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তা হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ এমন জাতির জন্য, যারা ঈমান রাখে।’ {সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ৫২}
আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির মুহাম্মাদ আমিন শানকিতী (রহ.) বলেন,
ولا شك أن هذا القرآن العظيم هو النور الذي أنزله الله إلى أرضه ليستضاء به فيعلم في ضوئه الحق من الباطل والحسن من القبيح والنافع من الضار والرشد من الغي
‘সন্দেহ
নেই যে, এই কুরআনই হচ্ছে সেই নূর, যা
আল্লাহ তা‘আলা ভূপৃষ্ঠকে আলোকময় করতে অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সেই
আলোর সাহায্যে হক ও বাতিল এবং ভালো ও মন্দ পার্থক্য করা যায়। ক্ষতি ও উপকারী বস্তু
চেনা যায়। ভ্রান্তি থেকে সঠিক পথের দিশা পাওয়া যায়।’
ইলমকে আল্লাহ মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ লেবাস বলে অভিহিত করেছেন। যথা-
ইলমকে আল্লাহ মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ লেবাস বলে অভিহিত করেছেন। যথা-
﴿ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي
سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ ذَٰلِكَ مِنۡ
ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ ٢٦ ﴾ [الاعراف: ٢٦]
‘হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ {সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ২৬}
কোনো
কোনো মুফাসসির বলেন, আলোচ্য আয়াতে লিবাস দ্বারা ইলম, রী-শা
দ্বারা ইয়াকিন এবং লিবাসুত তাকওয়া দ্বারা লজ্জাশীলতা উদ্দেশ্য।
এসব
আয়াত ছাড়াও আরো বহু আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইলম ও ইলমের
বাহকদের প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে মূর্খতা ও ইলমহীনতার নিন্দাও করেছেন কুরআনের
বহু জায়গায়।
ইলম অন্বেষণের ফযীলত ও মর্যাদা - ইলমের গুরুত্ব
[প্রিয়
পাঠক, এটি লেখকের ইলম অন্বেষণ সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনার
প্রথম কিস্তি। ইলম হাসিলের মর্যাদা ও উদ্দেশ্য এবং ইলম অর্জনের নীতিমালা, অন্তরায়
ও ভুল-ভ্রান্তিসমূহ ইত্যাকার নানা বিষয়ে আমরা কয়েক কিস্তিতে সুনির্দিষ্ট আলোচনা
করব ইনশাআল্লাহ।]
আমাদের এই মহান ধর্মে ইলমকে অনেক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ইলমের ধারক-বাহকরা নবী-রাসূলদের উত্তরাধিকারী। আর আবেদ ও আলেমের মর্যাদার ফারাক আসমান ও যমীনের মতো। কায়স ইবন কাছীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمَ رَجُلٌ مِنَ الْمَدِينَةِ عَلَى أَبِي الدَّرْدَاءِ ، وَهُوَ بِدِمَشْقَ فَقَالَ : مَا أَقْدَمَكَ يَا أَخِي ؟ فَقَالَ : حَدِيثٌ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَدِّثُهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَمَا جِئْتَ لِحَاجَةٍ ؟ قَالَ : لاَ ، قَالَ : أَمَا قَدِمْتَ لِتِجَارَةٍ ؟ قَالَ : لاَ ، قَالَ : مَا جِئْتُ إِلاَّ فِي طَلَبِ هَذَا الحَدِيثِ ؟ قَالَ : فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَبْتَغِي فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الجَنَّةِ ، وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضَاءً لِطَالِبِ العِلْمِ ، وَإِنَّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الحِيتَانُ فِي الْمَاءِ ، وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ ، كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ ، إِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ ، إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا العِلْمَ ، فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.
মদীনা
থেকে এক ব্যক্তি দামেশকে আবূ দারদা রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে এলো। তিনি জিজ্ঞেস
করলেন, হে ভাই, কোন জিনিস এখানে তোমার
আগমন ঘটিয়েছে?
তিনি
বললেন : একটি হাদীস এখানে আমাকে এনেছে, যা আপনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন বলে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে।
তিনি
জানতে চাইলেন : তুমি কি অন্য কোনো প্রয়োজনে আসো নি ?! তিনি
বললেন, না।
জানতে চাইলেন : তুমি কি বাণিজ্যের জন্যে আসো নি?! উত্তর দিলেন, জী না। তিনি জানালেন, আমি কেবল এ হাদীস শিখতেই আপনার কাছে এসেছি।
জানতে চাইলেন : তুমি কি বাণিজ্যের জন্যে আসো নি?! উত্তর দিলেন, জী না। তিনি জানালেন, আমি কেবল এ হাদীস শিখতেই আপনার কাছে এসেছি।
তিনি
বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের
উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর তালিবুল
ইলমকে খুশি করতে ফেরেশতারা তাঁদের ডানা বিছিয়ে দেন।
আলেমের জন্য আসমান ও যমীনের
সবাই মাগফিরাত কামনা করতে থাকে। এমনকি পানির মাছগুলো পর্যন্ত। আর আবেদের ওপর
আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল তারকার ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের
উত্তরাধিকারী। তবে নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা কেবল
ইলমের ওয়ারিশ বানান। অতএব যে তা গ্রহণ করে সে পূর্ণ অংশই পায়।’ [তিরমিযী
: ২৬৮২]
আর
আলেমগণ হলেন বান্দাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রক্ষী। কারণ তাঁরা শরীয়তকে
ভ্রান্তপন্থীদের বিকৃতি ও অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করেন। আলেমদের জন্য এ এক
বিশাল মর্যাদার ব্যাপার। দীনের ব্যাপারে তাঁদের কাছেই ছুটে যেতে হয়।
হতে হয়
তাঁদেরই শরণাপন্ন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অজ্ঞদের জন্য
আবশ্যক করে দিয়েছেন তাঁদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা। তিনি ইরশাদ করেন,
﴿ فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٤٣ ﴾ [النحل: ٤٣]
﴿ فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٤٣ ﴾ [النحل: ٤٣]
‘সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর যদি তোমরা না জান’। {সূরা
আন-নাহল, আয়াত : ৪৩} আর প্রকৃতপক্ষে তাঁরা
মানুষের চিকিৎসক। কেননা দেহের রোগের চেয়ে আত্মার ব্যাধিই বেশি। কারণ, মূর্খতা
একটি রোগ আর এই রোগগুলোর ওষুধ হলো এই ইলম। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
« فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ ».
‘
« فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ ».
‘
নিশ্চয়
অজ্ঞতার চিকিৎসা হলো জিজ্ঞাসা’। [আবূ দাঊদ : ৩৩৬]
No comments:
Post a Comment